ঢাকা,বুধবার, ১ মে ২০২৪

লামায় জীবন বাঁচাতে সাঁতার শিখছেন ৩০ শিক্ষার্থী

লামা প্রতিনিধি ::  পুকুর-দীঘি, খাল-নদী-হাওর, পাহাড়ি ঝর্ণা-ঝিরি কিংবা সাগরের পানিতে মনের আনন্দে নেমে এমনকি গোসল করতে গিয়ে ডুবে মারা যাচ্ছে অনেক শিশু-কিশোর-কিশোরী, যুবক-তরুণ-তরুণী ও বৃদ্ধ। এর প্রধান কারণটি হলো সাঁতার না জানা। আগের প্রজন্মের মানুষের সাঁতারের শখ আর অভ্যাস দুইই ছিল। কিন্তু নতুন প্রজন্মের কাছে তা বলতে গেলে অজানা ও ভয়ের বিষয়ই রয়ে গেছে। এতে করে বেঘোরে অনেকেরই মৃত্যু ঘটে পানিতে ডুবে গিয়ে। সাঁতার না জানার কারণে দেশে ঘণ্টায় গড়ে দুজন ছেলে-মেয়ে প্রাণ হারাচ্ছে; এই তথ্যের ভিত্তিতে স্কুল ও কলেজের সব শিক্ষার্থীকে সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ নেয় সরকার৷ এরই ধরাবাহিকতায় ‘সাঁতার শিখুন, জীবন বাঁচান’-এ শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলায় গত ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু হয় সাঁতার শেখানোর ব্যাতিক্রমধর্মী কর্মসূচি। বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচী ২০১৯-২০২০ইং এর অধীনে মাস ব্যাপী বিনামুল্যের এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। পৌরসভা এলাকার লামামুখ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরে প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) ইশরাত সিদ্দিকা। এ সময় বান্দরবান জেলা ক্রীড়া অফিসার মাঈন উদ্দিন মিলকি, লামামুখ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর শুক্কুর, প্রশিক্ষক সঞ্জয় বড়–য়া, সহকারী প্রশিক্ষক মো. সেলিম উদ্দিন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের একান্ত সহকারী কামরুল হাসান পলাশ ও রেপারি মোহাম্মদ ইব্রাহীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত চলে এ প্রশিক্ষণ। উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ৩০জন শিক্ষার্থীকে হাতে নাতে শেখানো হচ্ছে সাঁতার। তা ছাড়া দীর্ঘক্ষণ সাঁতার না কেটে কিভাবে জলে ভেসে থাকা যায় তাও শিখানো হচ্ছে এ প্রশিক্ষণে। যাতে কোন শিশু পানি পড়ে দূর্ঘটানায় পতিত হলে উদ্ধাকারী দল না পৌছা পর্যন্ত যেন শিশু তার জীবন রক্ষা করতে পারে।

এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল অভিযোগ করে জানায়, পুকুর ও জলাশয়গুলো নির্বিচারে ভরাট করায় শিশুরা সাঁতার শেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের এ অঞ্চলে পানিতে ডুবে সাঁতার না জানা শিশুদের মৃত্যুর হার দিন দিন বাড়ছে। তারা আরো বলেন, গত এক বছরে উপজেলায় পানিতে ডুবে মারা গেছে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী প্রায় অর্ধশত মানুষ।

প্রশিক্ষণার্থী হুমাইরা আফরোজ ঐশি, সুইখিং মার্মা ও জাহেদুল ইসলাম বলেন, আগে পানিতে নামতে ভয় লাগতো। কারণ সাঁতার জানতাম না। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এখন নিজেকে পানি থেকে রক্ষা করতে পারবো-সে মনোবল সৃষ্টি হয়েছে।

সাঁতার প্রশিক্ষক সঞ্জয় বড়–য়া জানান, প্রতিদিনই কোন না কোন স্থানে পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে শিশু কিশোর কিংবা তরুণ বৃদ্ধরা। কারণ একটাই সাঁতার না জানা। কিন্তু সাঁতার না শিখে তো পানিতে নামা যায় না বা উচিৎ না। আর তাই দায়িত্ববোধ থেকেই সরকার এ মহতি উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে মুক্ত সাঁতার, পিট সাঁতার, প্রজাপতি সাঁতার ও বুক সাঁতারের ওপর হাতে নাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে সরকারী নিদের্শনা মোতাবেক আরো শিক্ষার্থীকে সাঁতার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তিনি বলেন, এ প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য জীবন বাঁচার প্রয়োজনে ২৫মিটার দূরত্ব যেন সাবলীলভাবে যে কোন শিশু সাঁতারাতে পারে। সাঁতার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে আসবে।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর এ জান্নাত রুমি বলেন, পানি থেকে জীবন রক্ষায় সাঁতার প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। তাই প্রতিটি অভিভাবকের উচিৎ তাদের সন্তানদের সাঁতার শেখানো। অভিভাবকরা তাদের শিশুদের যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলছেন, ঠিক তেমনি করে শিশুদের সাঁতার শিক্ষার বিষয়েও অভিভাবকদের গুরুত্ব দিতে হবে।

পাঠকের মতামত: